গণমাধ্যম নিউজ
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী রাফার একটি তাঁবু আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলের হামলার পর তা নিয়ে বিশ্বনেতাদের ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রাফায় আশ্রয়শিবিরে হামলা এবং তা নিয়ে বিশ্বনেতাদের ক্ষোভ প্রকাশের জেরে সোমবার ইসরায়েলি পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা শোরগোল করে।
পার্লামেন্টে নেতানিয়াহু বলেন, “রাফা থেকে এরই মধ্যে আমরা প্রায় ১০ লাখ সাধারণ ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নিয়েছি। এবং বেসামরিক মানুষদের ক্ষতি না করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পরও মাঝেমধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেদনাদায়ক ভুল হয়ে যায়।
“আমরা ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করছি এবং একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হব। কারণ, এটাই আমাদের নীতি।”
গত রোববার রাতে রাফার তেল আল-সুলতান এলাকার একটি তাঁবু আশ্রয়শিবিরে আকাশ হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের অর্ধেকই নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ বলে জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারা জানান, হামলায় আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। অনেকেই মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারো কারো দেহে শার্পনেলের আঘাত রয়েছে।
হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন জানিয়েছেন, শিবিরটিতে আশ্রয় নিয়ে আছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বোমা হামলা হয়।
ইসরায়েল রাফার পূর্বাঞ্চলে দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অভিযান চালাচ্ছে। রোববার রাতের হামলার বর্ণনা দিয়ে এক ফিলিস্তিনি মা বলেন, “আমরা দোয়া করছিলাম… শিশুদেরকে ঘুম পাড়ানোর জন্য বিছানায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন বিকট এক শব্দ শুনি।
“আমাদের চারপাশে আগুন জ্বলে যায়। সব শিশু চিৎকার শুরু করেছিল… শব্দ ছিল ভয়ংকর। আমাদের মনে হচ্ছিল ধাতু আমাদের ওপরে এসে পড়ল বলে। শার্পনেল ঘরের ভেতরে এসে পড়েছিল।”রাফায় আশ্রয়শিবিরে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন থেকে ইসরায়েলকে গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি বাইডেনের নিজ দল থেকেও ইসরায়েলে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো স্থগিত করার দাবি উঠেছে বলে জানায় বিবিসি।
তেল আল-সুলতানের ওই অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে হামলার বিষয়ে ইসরায়েল বলছে, ‘সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ তাদের বিমান বাহিনী রাফায় হামাসের একটি কম্পাউন্ডে নিখুঁতভাবে আঘাত হেনেছে। এতে পশ্চিম তীরে নিয়োজিত হামাসের চিফ অফ স্টাফ ও ইসরায়েলে প্রাণঘাতী হামলার পেছনে থাকা হামাসের আরেকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হয়েছেন।
রাফা থেকে ইসরায়েলের তেল আবিব লক্ষ্য করে হামাসের দীর্ঘ পাল্লার রকেট ছোড়ার জবাব দিতে ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের মুখপাত্র বলেন, “হামাসকে নির্মূল করার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে এবং আমরা এটাও বুঝতে পারছি যে, রোববার রাতের হামলায় দুইজন জ্যেষ্ঠ হামাস জঙ্গি নিহত হয়েছেন। যারা ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার জন্য দায়ী।“তবে আমরা এটাও স্পষ্ট করেই বলেছি, ইসরায়েলকে অবশ্যই বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় সম্ভাব্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “এই অভিযান বন্ধ হতে হবে। রাফায় ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কোনও নিরাপদ জায়গা নেই।”
বিশ্বনেতাদের এই ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যেই সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্টে নেতানিয়াহু বলেন, “রোববারের ওই হামলা খুবই দুঃখজন ঘটনা। কিন্তু গাজায় আমাদের সব লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ শেষ করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।”
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) গাজার সাধারণ মানুষদের ক্ষতি না করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে বলেও জোর দাবি করেন তিনি। বলেন, “যুদ্ধের মধ্যে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় সম্ভাব্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইসরায়েল এবং এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”