স্টাফ রিপোর্টার
লাখো ভক্তের সমাগমে সকাল-সন্ধ্যা আরাধনা আর ব্যপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পালিত হয়েছে শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৩৪ তম তিরোধান উৎসব।
মানবহিতৈষীখ্যাত মহাযোগী পুরুষ শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর এই তিরোধান উৎসব পালিত হয়েছে গত রোববার বারদীতে অবস্থিত লোকনাথ আশ্রমে। ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকনাথ ভক্তরা আশ্রমে সমবেত হয়ে সকাল-সন্ধ্যা আরাধনা, প্রণামি আর দান-দক্ষিণার মাধ্যমে পালন করেছেন এই তিরোধান উৎসব। তিরোধান উৎসবকে কেন্দ্র করে আশ্রম এলাকায় বসেছে সপ্তাহকালব্যাপী লোকজ মেলা।
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম কর্তৃপক্ষ ও লোকনাথ ভক্তরা জানান, লোকনাথ ব্রহ্মচারী সাধনা করা ও মানবতার বাণী, আত্মতত্বের বাণী প্রচারের জন্য তার জন্মস্থান ভারত, নেপাল, ভুটান, তুর্কিস্থান, ইরাক ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমনের পর বাংলাদেশে এসে দীর্ঘ ২৬ বছর সোনারগাঁয়ের বারদীতে অবস্থান করে ১৫০ বছর বয়সে ১৯ জ্যৈষ্ঠ দেহ ত্যাগ করেন। সেই থেকে প্রতি বছর ১৯ জ্যৈষ্ঠ লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান উৎসব পালিত হয়ে আসছে। উপ মহাদেশের বিভিন স্থান থেকে ব্রহ্মচারীর ভক্তরা আসেন প্রণাম জানাতে।
মানবতাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম, এই ধর্মকে নিজ বুকে লালন করেছেন এই মহা সাধক। এই মহা সাধকের আশ্রমের জন্যই বারদী এখন মঙ্গলালোকে আলোকিত একটি গ্রাম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানান বয়সী মানুষের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক লোকনাথ ভক্ত বারদী আশ্রমে সমবেত হয়ে “ওঁ নমো : ভগবতে লোকনাথায় নমো :” বলে লোকনাথ ব্রহ্মচারীকে ভক্তি জানিয়ে সকাল-সন্ধ্যা আরাধনা করে প্রণামি আর দান-দক্ষিণার মাধ্যমে পালন করেছেন এই তিরোধান উৎসব।
এদিন প্রথমে প্রভাত কীর্তন পরে গীতাপাঠ পর্যায়ক্রমে বাল্যভোগ, প্রসাদ বিতরণ, ব্রহ্মচারীর জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা, নিরবতা পালন, পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, রাজ ভোগ, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় আরতি কীর্তনের মধ্য দিয়ে মূলত শেষ হয় তিরোধান দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। লোকনাথ ভক্তরা মন্দিরে টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার দিয়েছেন প্রণামি হিসেবে। দুর দুরান্ত থেকে আগতরা থেকেছেন আশ্রমের বিশ্রামাগারগুলোতে। উৎসব উপলক্ষে আগত ভক্তদের অনেকে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর কাছে আরাধনা করে মনোষ্কামনা পূরণের আশায় বিভিন্ন গাছে বেঁধেছেন লাল সূতা। জ্বেলেছেন মোমের প্রদীপ ও ধুপকাঠী। আশ্রমের প্রধান ফটক ও যাত্রী নিবাসের ভবনগুলোতে করা হয়েছিল নানা রকম আলোক সজ্জা।
এদিকে তিরোধান উৎসব উপলক্ষে আশ্রমের বাইরের মাঠে বসেছে সপ্তাহকালব্যপী গ্রামীন লোকজ মেলা। মেলায় কাঠ, বাঁশ, বেত, লৌহজাত পন্য, কসমেটিক্স ও খেলাধুলার সামগ্রীসহ হরেক প্রকারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিভিন্ন দোকানীরা।
তাছাড়াও উৎসবে আগতদের জন্য বিনামূল্যে শিশুদের দুধ বিতরণ, ঔষধসহ চিকিৎসা সেবা, মিষ্টি, চিড়ামুড়ি, বাতাসা, পানি ও শরববত বিতরণের ব্যবস্থা নিয়েছে শ্রী শ্রী লোকনাথ সেবা সংঘ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, সীতা রাম সংঘ, শারদাঞ্জলি ফোরাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
অপরদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে আশ্রমের পুরো এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা।
এবার তিরোধান উৎসব পরিদর্শনে আসেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এমপি। তার সাথে স্থানীয় সাবেক সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকাসহ নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। উৎসবে আগতদের জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ।