স্টাফ রিপোর্টার
এস এস সিতে প্রত্যাশিত ফল পেলে কেবল শিক্ষার্থী নয়, সেই অর্জন ছুঁয়ে যায় অভিভাবকদেরও। ঢাকার হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া ফাকিহা ইয়াসমিনের মা জানালেন, একমাত্র সন্তানের ভালো ফলে তার আনন্দ যেন রাখার জায়গা নেই।স্কুলের গণ্ডি শেষ করে উচ্চশিক্ষার পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার এমন আনন্দ শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে দেখা গেছে রোববার ঢাকার বিভিন্ন স্কুলে।বেলা বাড়লে স্কুলগুলোতে ফল টানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় আনন্দ উদযাপন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে গণভবনে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন। পরে বেলা সাড়ে ১২টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের ফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জেনেছে।
দুপুরে একজন অভিভাবক বলেন, “আনন্দের শেষ নাই আজকে আমার। মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে। আমাদের এক মাত্র মেয়ে, তাই আমরাও তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি যাতে মেয়েটা যুদ্ধে জয়ী হতে পারে। সামনের দিনেও ও যাতে ভালো ফলাফল করে সেজন্য সবার দোয়া চাই।” “এ বছর অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে গণিত তুলনামূলক কঠিন হয়েছে তাই, কয়েকজনের গণিতে এ প্লাস আসেনি। আর অন্য বিষয়গুলোতে ভালো মার্ক এসেছে।”বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান শাখার ছাত্রী তাশফিয়া মুর্শিদাও সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার মা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “এবার ওরা ফুল সিলেবাস থেকে পড়ে এ ফলাফল পেয়েছে। করোনার পরে এবারই প্রথম ফুল সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে। খুব চিন্তায় ছিলাম বাচ্চারা পারবে কিনা। কিন্ত তারা পেরেছে।”ভালো ফলাফলের জন্য গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে প্রাইভেট পড়তে হয়েছে জানিয়ে তাশফিয়া মুর্শিদা বলেন, “আমার কাছে এই দুটো বিষয় একটু কঠিন লাগত। পরে শিক্ষকদের সহযোগিতায় দুর্বল জায়গাটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।“বাসাবো থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় মেয়ে রাইদা জায়ান সারাহকে নিয়ে বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুলে আসেন মারজানা আফরোজ।বিজ্ঞান শাখা থেকে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ার খবরে পেয়ে সারাহকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে মা বলেন, “তুমি সফল হয়েছ মা।”একই স্কুলের বাণিজ্য শাখার ছাত্রী সুপ্রভা রহমান শিতিল জিপিএ-৫ পেয়েছে।সুপ্রভা বলেন, “আমার কষ্ট সফল হয়েছে। এর চেয়ে আনন্দ আর কী হতে পারে? বাবা-মাসহ সবাইকে খুশি করতে পেরেছি।”
ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, “গতবারের চেয়ে এবার ফলাফল কিছুটা খারাপ করেছে শিক্ষার্থীরা৷ শুধু তো এখানে না, দেশজুড়েই একই অবস্থা। কোভিডের সময় মোবাইলের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বেড়ে যায়। পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ কিছুটা কমেছে। আর কোভিডের পরে সিলেবাস ছোট ছিল। এবার ফুল সিলেবাস হওয়ায় কিছুটা কঠিন ছিল তাদের জন্য। তবুও যারা পড়েছে তারা ভাল করেছে।”হতাশাও ছিল কারো কারো কথায়। ভিকারুননিসার শিক্ষার্থী আফসানা জেরিন জিপিএ-৫ পাননি, তাই মন খারাপ। “আমি দুইটা সাবজেক্টের জন্য জিপিএ-৫ পেলাম না। একটু তো মন খারাপ হচ্ছেই।”মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনতাসীর আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেন, “আমি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি খুবই খুশি। আমার আব্বা-আম্মা সাপোর্ট না করলে এই ফলাফল সম্ভব হত না।”এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা গতবারের চেয়ে বেশি। স্কুলের গণ্ডি পেরোনো এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।এবারও পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা দুদিক থেকেই এগিয়ে আছে মেয়েরা।ছাত্রদের পাসের হার যেখানে ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সেখানে ছাত্রীদের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ পাস করেছে।কোভিড মহামারীতে এসএসসি পরীক্ষার সূচি এলোমেলো হয়ে পড়েছিল। চলতি বছর অনেকটা আগের ধারাবাহিকতায় ফেরে এই পাবলিক পরীক্ষা।গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়, শেষ হয় ১২ মার্চ।