স্টাফ রিপোর্টার
সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন সরকারি ও বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য। দুর্নীতির সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে একটা দেশ চলতে পারে না। অন্যদিকে সরকারি দলের সংসদ সদস্য বি এম কবিরুল হক বলেছেন, স্বীকার করতেই হবে যে দেশে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। জাতীয় সংসদে বুধবার ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এই দুই সংসদ সদস্য এ কথা বলেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি কিছু দুর্নীতির ঘটনা সামনে এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শত শত কোটি নয়, হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। সময় এসেছে দুর্নীতি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার এবং পুরো ব্যবস্থা নিয়ে একটি পর্যালোচনা করার।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের যেভাবে হলফনামায় সম্পদের হিসাব দিতে হয়, সেভাবে সরকারি কর্মচারীদেরও চাকরির শুরুতে সম্পদের হিসাব নেওয়ার বিধান করার দাবি জানান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, এখন জনগণ দেখছে কীভাবে দুর্নীতি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট হচ্ছে। সবাই দুর্নীতিবাজ নন। কিন্তু সবার ওপর দায় আসছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগের বিরোধিতা করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এই সুযোগ অনৈতিক। অবৈধ আয় যদি ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করা যায়, তাহলে কেন অন্যরা কর দেবেন?
দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে:
দুর্নীতির কারণে মূল দোষ জনপ্রতিনিধিদের হয় বলে উল্লেখ করে সংসদ সদস্য কবিরুল হক বলেন, ‘সংসদে সাড়ে তিন শ এমপি, তাঁদের দুর্নীতি করার সুযোগ কোথায়? আমার কথায় কোনো কাজ হয় না, চাকরি হয় না। আমার কথায় সরকারের কোনো কেনাকাটা হয় না। তাহলে দুর্নীতি কীভাবে করব? তাঁরাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, যাঁরা সরকারের কেনাকাটায় জড়িত।’
কবিরুল হক বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আছেন। একজন পিডি কত শত কোটি টাকার মালিক, তা কল্পনা করা যায় না। তিনি মনে করেন, তাঁরা মানসিক বিকারগ্রস্ত। তাঁদের চিকিৎসা প্রয়োজন।
সমালোচনা গৎবাঁধা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ অভিযোগ করেন, বাজেট দেওয়ার পর অনেকে গৎবাঁধা সমালোচনা করেন। বাজেটের সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশে নানা ধরনের বিশেষজ্ঞ আছে। সব বিষয়ে বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ। বিশেষ কারণে অজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ও বিশেষ উদ্দেশ্যে বিশেষজ্ঞ। এসব বিশেষজ্ঞ নানা ধরনের মত দেন। ভারত ও পাকিস্তানে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি নিয়ে কথা হয়, তার ছিঁটেফোঁটাও আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা করেন না। তাঁরা শুধু সমালোচনাই করতে পারেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, কিছু বিশেষজ্ঞ আছেন, তাঁরা মনে করেন, যদি ভুল ধরা না হয়, তাহলে তাঁরা যে বিজ্ঞ, তা প্রমাণিত হয় না। এ জন্য তাঁরা ভুল ধরেন। তিনি বলেন, ‘কেউ পড়েছেন রাজনীতি, তিনি অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ। পড়েছেন আইন, তিনি পরিবেশ–বিশেষজ্ঞ। পড়েছেন অর্থনীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানও অর্থনীতি, তিনি আবার পরিবেশ-তেল-গ্যাস বিশেষজ্ঞ। এ ধরনের নানা বিশেষজ্ঞ অছে।’