স্টাফ রিপোর্টার
গ্যাস সংকটে নারায়ণগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিল্প কারখানার উৎপাদন। চলতি বছরের আগ থেকেই গ্যাস সংকটে দেশের শিল্পখাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর পেট্রোবাংলার গ্যাস স্টোরেজ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এর মাত্রা আরও বেড়ে যায়। যার দরুণ প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জেও শিল্পোৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে।
দেশের তৈরী পোশাকের রপ্তানি খাতের আয়ে বড় অবদান রাখে নারায়ণগঞ্জের শিল্প-কারখানা। সেই সাথে বিভিন্ন শিল্প পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে চলতি বছরে নিবন্ধিত কারখানা সংখ্যা ৫ হাজার ৩৭ টি। এর মধ্যে আরএনজি ১০৪৭ টি ও নন-আরএনজি সংখ্যা ৩৯৯০ টি। এসকল কারখানায় সিংহভাগের ক্ষেত্রে জ্বালানির অন্যতম উপাদান প্রাকৃতিক গ্যাস। তবে এই গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পোৎপাদনে ধস নামছে বলে জানিয়েছেন শিল্প মালিকরা। তারা বলছেন, প্রয়োজনমত জ্বালানি পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, জ্বালানির চাহিদা মেটাতে বাড়তি খরচ লাগছে। এরই সাথে সময়মতো পণ্যের অর্ডার সম্পন্ন না হওয়ায় আস্থা হারাচ্ছেন বিদেশী ক্রেতারা।
বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন)-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানে আমরা অধিকাংশ সময়েই গ্যাস পাচ্ছি না। আমাদের উৎপাদন মাত্রা ক্রমাগতই হ্রাস পাচ্ছে এবং এর সাথে বাড়তি খরচও হচ্ছে। পণ্য রপ্তানিতে এমনিতেই অর্ডার কমে গিয়েছে। এর উপর আমাদের হাতে যে অর্ডারগুলো আছে তা সময়মতো পূরণ করতে দেরী হচ্ছে। এতে করে আস্থা হারাচ্ছেন বিদেশি বায়াররা। জ্বালানি না পাওয়ায় পণ্যের কাচামাল প্রসেসিং, আনুষাঙ্গিক এক্সসরিজ নির্ধারণে বিলম্ব হচ্ছে। যথাসময়ে অর্ডার সম্পূর্ণ করতে কখনও কখনও দিন-রাত কারখানায় কাজ হচ্ছে, যেখানে শ্রমিকদের উপর চাপ পড়ে। সবমিলিয়ে গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমে গিয়েছে, সেই সাথে কমেছে রপ্তানি। সামনে দেশের রপ্তানি খাতে আয় আরও কমবে বলে আশঙ্কা করছি।
তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা, তিতাসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আমরা শিল্প মালিকরা মিটিং এ বসেছিলাম। আমরা জানতে পারি, ২০২৬ সালের জুনের আগে গ্যাস সংকট পুরোপুরি দূর হচ্ছে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেসময় আসতে আসতে আমাদের কতজন শিল্প মালিকরা টিকে থাকবেন।
স্থানীয় তিতাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা এখন কল কারখানা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি, যার জন্য বিকল্প জ্বালানি সংগ্রহ করে অর্ডারগুলো সম্পূর্ণ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে অন্যতম হলো সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার। কিন্তু স্থানীয় তিতাস কর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জে পাম্পগুলোকে সিলিন্ডারে করে গ্যাস বিক্রি করতে নিষেধ করেছে। আমদের শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করছে স্থানীয় তিতাসের কর্মকর্তারা। সেই সাথে তাদের এ সিদ্ধান্তে প্রশাসনও সায় দিচ্ছে। আমি এমন সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তবে নারায়ণগঞ্জে সিলিন্ডারে করে গ্যাস বিক্রয় নিষেধ- এমন কোন নির্দেশনা দেওয়া হয় নি বলে জানিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। তিতাস নারায়ণগঞ্জের পক্ষ থেকে লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানানো হয়, পাম্পগুলোয় তিতাস যে সিএনজি সাপ্লাই দিয়ে থাকে তা সিলিন্ডারে করে গ্যাস বিক্রি করা বিপজ্জনক। কোন পাম্প থেকে যদি সিলিন্ডারে করে গ্যাস বিক্রি করতে চায় তা করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে নির্দেশনা হলো, তা সতর্কতার সাথে করতে হবে। সিলিন্ডারে করে গ্যাস পরিবহনে কোন দুর্ঘটনা ঘটলো, তার দায়ভার নিবে পাম্প কর্তপক্ষ।
তিতাস কর্তৃপক্ষ আরও জানান, বর্তমানে গ্যাসের যে সংকট রিমালের প্রভাবে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টার্মিনালের স্টোরেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার রিপেয়ার ও মেইন্টেন্যান্স এর জন্য সময় প্রয়োজন। আনুমানিক দুসপ্তাহ পর অর্থাৎ, এ মাসেই সোটরেজ রিপেয়ার হবে এবং গ্যাসের চাপ আগের চাইতে বাড়বে।