স্টাফ রিপোর্টার
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “আমরা দীর্ঘ লড়াই করেছি। তারপরে যদি মনে করেন যে- আমাদের লড়াই শেষ হয়ে গেছে, তাহলে ভুল করবেন। এখন অত্যন্ত একটা ভাসমান অবস্থায় আছে।
‘‘যেকোনো মুহূর্তে- ভারতে বসে আছেন শেখ হাসিনা, তিনি তার সুযোগ গ্রহন করতে পারেন। ইতোমধ্যে চক্রান্ত শুরু করেছে, সেই চক্রান্ত প্রতিরোধ করাই আমাদের কাজ।”বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত দোয়া মাহফিলের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, “আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে আসুন আমরা সবাই সেই প্রতিজ্ঞাই আল্লাহ তা’আলার কাছে করি- তিনি যেন আমাদের বিএনপির যে ভাবমূর্তি, যেটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তৈরি করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া তৈরি করেছেন, তারেক রহমান সাহেব তৈরি করেছেন- সেই ভাবমূর্তিকে সবাই অক্ষুণ্ন রেখে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।
‘‘আমরা বিএনপি ১৭ বছর ধরে লড়াই করে তার একটা ভিত্তি তৈরি করেছি, সেই ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে আমাদের ছেলেরা, তরুণ, যুবক, ছাত্ররা তারা আন্দোলন বিজয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে…বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে…আবু সাঈদ থেকে শুরু করে আর অনেকে প্রায় হাজার খানেক ছাত্র-শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছে।”বিএনপি মহাসচিব বলেন, “৩-৫ অগাস্ট আমাদের ছাত্রদলের বহু ছেলে প্রাণ দিয়েছে। আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম তখন ১২৪ জন ছিল। আমি খবর নিয়ে দেখলাম যে, সেখানে ৯০ জন হচ্ছে ছাত্রদলের ছেলে।
“কিন্তু কখনো সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। সকলকে এক হয়ে এখন কাজ করতে হবে।”মির্জা ফখরুল বলেন, “এই যে কমিউনালিজমের কথা বলছে না, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার এসব কথা বলছেন না- এটা একটা চক্রান্ত। এই ধুঁয়া তুলে তারা (আওয়ামী লীগ) আরেকটা ঝগড়া করতে চায়।
‘‘আপনাদের দায়িত্ব নিজ নিজ এলাকায় শান্তি ব্রিগেড তৈরি করেন, শান্তি ব্রিগেড তৈরি করে পাহারা দেবেন। সমস্ত সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়, মন্দির, গির্জা এসমস্ত পাহারা দেবেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তাদের জীবনমালের দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের।”
ফখরুল বলেন, “আমার একজন শিক্ষক ছিলেন, ঈমানদার আলেম ছিলেন মাওলানা তমিজ উদ্দিন সাহেব। তিনি বাবরি মসজিদে হামলার সময়ে সকলকে বলেছিলেন যে- দেশে সংখ্যালঘুরা আছে, সেখানে সংখ্যাগুরুদের অর্থাৎ আমাদের কাছে তারা আমানত। এই আমানত যে খেয়ানত করে সে আর মুমিন থাকে না। একথাগুলো মাথার ভেতরে সকলকে আনতে হবে এবং তাদের প্রটেকশনের ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।”‘নতুন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে পত্র-পত্রিকায় যে বিরূপ খবর দেখি, তখন কিন্তু আমরা আতঙ্কিত হই। আবার কোনো নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে যে, জনগণের ভোটকে জনগণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার জন্য আবার কোনো নব্য ফ্যাসিবাদ এসে উপস্থিত হচ্ছে কি না- এদিক থেকে সজাগ থাকতে হবে।
‘‘অর্থাৎ ঐক্য, ঐক্য, ঐক্য এবং ধৈর্যশীল অবস্থা, সহনশীল অবস্থা, ডিসিপ্লিনের মধ্যে আমাদেরকে চলতে হবে। এই কথা বলছি এজন্য যে- আজকে ম্যাডামের জন্মদিনের অনুষ্ঠান না? ক’জন এসছেন? কালকে আপনাদের প্রোগ্রাম ছিল না? ‘জন আসছিলেন। সেভাবে আসে নাই। অনেক কম, আজকেও কম। কী জন্য? জয় হয়ে গেছে?”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “না এই যুদ্ধকে জারি রাখতে হবে, এই সংগ্রামকে চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে আমরা কিন্তু অনেক বিপদে পড়ে যাবো। এক ফ্যাসিবাদকে পরাজতি করেছি আমরা। নব্য ফ্যাসিবাদ যেন না আসতে পারে তার জন্যে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।”
‘জঞ্জাল সাফ করতে সরকারকে কিছু সময় দিতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সরকার একেবারে নরম সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার- এটা মনে রাখতে হবে। তার দায়িত্ব একটা নির্বাচন করে দিয়ে যাবে, তাই না?
‘‘জঞ্জাল জমা হয়েছে তো। এই জঞ্জাল তো সাফ করতে হবে। এজন্য তাদেরকে কিছু সময় তো দিতে হবে। সেইভাবে কাজ করে আমাদের সংগ্রামকে জারি রাখতে হবে। ম্যাডামের যে আদর্শ- তাকে অনুসরণ করতে হবে, ম্যাডামের যে বক্তব্য তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। কোনো প্রতিহিংসা নয়, কোনো প্রতিশোধ নয়।”
অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও আশু সুস্থতা কামনা এবং চলমান আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ঢাকা ছাড়াও মহানগর, জেলা ও উপজেলায় এই দোয়া-মাহফিল হচ্ছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, শাম্মী আখতার, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, যু্বদলের মোনায়েম সুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, ওলামা দলের কাজী মো. সেলিম রেজা, কাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।