স্টাফ রিপোর্টার
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘বাংলাদেশের তরুণেরাই নতুন বাংলাদেশ গড়বে’ বলে আশা ব্যক্ত করে বলেছেন, তারা ‘রিসেট বাটন’ বাটন চেপেছে; এখন সব পুরনো শেষ।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’-এর এক আয়োজনে অংশ নিয়ে বিশ্ববাসীর উদ্দেশে এই আশার কথা শোনান তিনি।
বাসস লিখেছে, অনুষ্ঠানে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস বিল ক্লিনটনের সঙ্গে তার পরিচয় ও সম্পর্কের প্রথম দিনের গল্প, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কাহিনি এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে মুহাম্মদ ইউনূস তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ক্লিনটনের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলার ফাঁকে তার দুই সফরসঙ্গীকে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রধান উপদেষ্টা তার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলমকে সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরে সরকার পতন আন্দোলনের মূল কারিগর হিসেবে তুলে ধরেন।
বাসস লিখেছে, একপর্যায়ে মাহফুজকে সামনে এগিয়ে দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পেছনের মূল কারিগর মাহফুজ। যদিও মাহফুজ সব সময় বলে, সে একা নয়, আরও অনেকে ছিল। তবে সে গণ-অভ্যুত্থানের পেছনের কারিগর হিসেবে পরিচিত।”
ক্লিনটন অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক ইউনূসকে বাংলাদেশের তরুণদের ডাকে সাড়া দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া নেতা বলে পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় পুরো হল করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। তখন দুই নেতা কোলাকুলি করেন।
ক্লিনটন বলেন, “আমার জানা মতে, আপনিই (ড. ইউনূস) একমাত্র প্রবীণ, যাকে দেশের তরুণরা তার নিজের অনন্য সাধারণ অর্জনের জন্য ক্ষমতায় বসিয়েছে।”
ক্লিনটনের সঙ্গে তার প্রথম যোগাযোগের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বক্তব্য শুরু করেন। দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাদের কথাও বলেন। পুরো হল আবার করতালিতে মুখরিত হয়।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মঞ্চে ডেকে নিয়ে তাদের দেখিয়ে ইউনূস বলেন, “আমি বুঝতে পারছিলাম না, বাংলাদেশে কী ঘটছে। হঠাৎ বাংলাদেশের সব তরুণ একত্রিত হয়েছেন এবং বলছেন, যথেষ্ট হয়েছে। আমরা আর এসব (অন্যায়, বৈষম্য) সহ্য করব না। তারা সহ্য করেননি, তারা সরকারের (ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের) ছোড়া গুলির সামনে বুক পেতে নিজেদের জীবন দিয়েছেন।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “তাদের দেখতে অন্য তরুণদের মতই মনে হয়। তাদের আলাদা করে মনে রাখতে পারবেন না। কিন্তু যখন তাদের কথা শুনবেন, তাদের কাজ দেখবেন, শিহরিত হবেন। তারা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছেন।
“তরুণরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি কিছু ভিডিও দেখেছি। তারা সেখানে এমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন, বলছিলেন, ‘আমাদের কতজনকে আপনারা হত্যা করতে পারবেন? আমরা এখানে আছি, আমাদের হত্যা করুন। কিন্তু আমরা বিশ্বকে বদলে দিয়েই ছাড়ব, আমরা বাংলাদেশকে বদলে দেব।’ এটাই তাদের প্রতিজ্ঞা ছিল, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “আগামীর বাংলাদেশ হবে তরুণদের বাংলাদেশ। তারা এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। আগের সরকার চলে যাওয়ার পর তারা আমাকে দেশের নেতৃত্ব নিতে আমন্ত্রণ জানান। আমি সেটাই করার চেষ্টা করছি। তরুণেরা জাতিকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।”
“তারা যেভাবে (আন্দোলন) করেছেন, তাতে পুরো জাতি এক হয়েছে। পুরো দেশের মানুষ এবার তরুণদের সমর্থন দিয়েছেন,” বলেন অধ্যাপক ইউনূস।
“আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। তারা (তরুণেরা) বলেছেন আমরা ‘রিসেট বাটন’ চেপেছি। সব পুরনো শেষ। এখন আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ব।”
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “দেশ গড়তে, নিজেদের গড়তে যে শব্দমালায়, যে ভাষায় তারা (আন্দোলনকারীরা) কথা বলেছেন, তা অসাধারণ। আমি আগে কখনও এভাবে কাউকে কথা বলতে শুনিনি। তারা তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ করতে প্রস্তুত। তারা যেভাবে কথা বলেছেন, তা সারা বিশ্বের তরুণদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।”
ড. ইউনূস তরুণদের স্বপ্ন সত্য করতে তাদের জন্য সাহায্য ও সমর্থন কামনা করে বলেন, “আমরা একসঙ্গে এই দায়িত্ব নিতে পারি।”
অনুষ্ঠানে ক্লিনটন বলেন, “আমি মনে করি, আমাদের সবার বাংলাদশের মঙ্গল কামনা ও তাদের সহায়তার জন্য যা করা দরকার, তা করা উচিত।”
এরপর ক্লিনটন ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিতে গেলে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলতে চান।
তিনি বলেন, “তরুণরা সব সময় তরুণদের নিয়ে কথা বলতে চান। তরুণদেরই নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের মত বুড়োদের নয়।”