গণমাধ্যম নিউজ
ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাঁধ দ্রুত পুনর্গঠনে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঘূর্ণিদুর্গত পটুয়াখালীতে তিনি বলেছেন, “যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, ইতোমধ্যে আমরা খোঁজ নিতে বসেছি। তাছাড়া আমি আবার সবার সঙ্গে বসব, যাতে যেখানে যেখানে যাদের বাড়িঘর ভেঙেছে, তাদের ঘরবাড়ি করে দেব; এইটুকু ভরসা আপনারা রাখবেন।”
আজ বৃহস্পতিবার কলাপাড়া পৌর শহরের সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ মাঠে দুই হাজার দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের পর বক্তব্য দিচ্ছিলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, “জলোচ্ছ্বাসের কারণে অনেক পুকুরের পানি নোনতা হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় মাছের ঘের ভেসে গেছে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে, ধানকাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তার পরেও তরিতরকারি যা নষ্ট হয়েছে, কৃষক যাতে আবার সেগুলো বপন করতে পারে; সেজন্য বীজ, সার- যা যা লাগে, সেগুলোর ব্যবস্থা ইনশাল্লাহ আমি করে দেব।
“নতুন উদ্যমে আপনারা যাতে চাষ করতে পারেন। আমি চাই, আমাদের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা পদক্ষেপ নিই। আর সেই ব্যবস্থা আমরা করে দেব।”ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে পটুয়াখালীতে দফায় দফায় প্লাবিত হয়েছে চরাঞ্চলসহ শতাধিক গ্রাম। তলিয়ে যায় পৌরসভাসহ জেলার নিম্নাঞ্চল। জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় জেলাটির বেশ কিছু পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এবার অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি সাইক্লোন সেন্টার করেছি, সেখানে মানুষ আশ্রয় পেয়েছে- যারা গৃহহীন, তাদেরকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দিয়েছি। যে কারণে মানুষ অন্তত আশ্রয়ের জায়গা পেয়েছে; পশুপাখি আশ্রয়ের ব্যবস্থা পেয়েছে।
“আমরা চাই, দুর্যোগ থেকে এই এলাকার মানুষ যেন মুক্তি পায়। আমরা জানি, এই এলাকা সবসময়ই দুর্যোগপ্রবণ। ইতোমধ্যে যে সমস্ত রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যে বাঁধগুলো ভেঙে গেছে, সেগুলোও মেরামতের কাজ ইতোমধ্যে আমরা শুরু করে দিয়েছি; যাতে বর্ষার আগেই আমরা বাঁধগুলো নির্মাণ করে জলোচ্ছ্বাস বা পানির হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হয়। দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন। রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ করে দিয়ে আপনাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা… বিদ্যুতের ব্যবস্থা সব করে দিয়েছি।”
মানুষের মৌলিকা চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার, আওয়ামী লীগ সরকার তা করে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি, সেখান থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ আর বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। মায়ের নামে আমরা বৃত্তির টাকা পাঠাই। যারা একেবারে হতদরিদ্র, বিনা পয়সায় খাদ্য সাহায্য দিই।
“এখন দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, যারা কিনতে পারে না- তাদের জন্য পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। অল্প টাকায় চাল, ডাল, তেল কিনে নিতে পারবে, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি। দেশের মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। পাশাপাশি মানুষের সার্বিক উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।”
রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য এখন সব জায়গায় খুব সহজেই যাওয়া যায় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আজকে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে এই পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো যায়। আগে কিন্তু আসা যেত না। পাশাপাশি গ্রামে গঞ্জে রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। এই দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে অবহেলিত ছিল।”এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কথা এসময় তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে বলেই এই অঞ্চলের উন্নয়ন হয়েছে। এর আগে অনেকেই ছিল, কেউ দৃষ্টি দেয়নি। এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। “আজকে অন্তত এটা বলতে পারি, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, কিন্তু সেটিকে মোকাবিলা করে মানুষের জীবনমান রক্ষা করা- সেটিই আমাদের লক্ষ্য।”