গণমাধ্যম সংবাদ
ভারতবাসী অধীর আগ্রহে ক্ষণ গণনা শুরু করেছে—কে হতে যাচ্ছেন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। কারণ, এরই মধ্যে গত শনিবার শেষ হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের সাত দফা ভোটগ্রহণ। আগামীকাল মঙ্গলবার জানা যাবে চূড়ান্ত ফলাফল।
বুথফেরত জরিপের ফলাফল অবশ্য গতকাল থেকেই আসতে শুরু করেছে। বেশির ভাগ ফলাফল বলছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স) জয়ী হতে যাচ্ছে। ৬৫ শতাংশের বেশি আসন পেতে পাচ্ছে তারা। অর্থাৎ, আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।
৬৫ শতাংশ মানে হচ্ছে, ৫৪৩ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৩৫০ আসন পেতে যাচ্ছে বিজেপি। কোনো কোনো জরিপে অবশ্য বিজেপির ৪০০ আসন পাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে। বলে রাখা ভালো, ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কোনো দল বা জোটকে সরকার গঠনের জন্য দরকার ২৭২ আসন।
এদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট বলছে, এসব বুথফেরত জরিপের কোনো ভিত্তি নেই। অতীতে বুথফেরত জরিপ ভুল প্রমাণিত হওয়ার অনেক নজির দেখা গেছে। এবার কংগ্রেস জোট অন্তত ২৯৫টি আসনে জিতবে।
কীভাবে কংগ্রেস জানল, তাদের জোট ২৯৫ আসনে জিতবে? শনিবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘আমাদের হাতে তো আর নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া নেই। তাই মিডিয়ার খেয়াল খুশিমতো জরিপও নেই। আমরা আমাদের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ও সাধারণ মানুষদের দেওয়া ভোটের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছি, এবার আমরা ২৯৫টির বেশি আসনে জিতব।’
মল্লিকার্জুন খাড়গের দাবি করা ‘জনগণের জরিপ’ অনুযায়ী ইন্ডিয়া জোট যদি সত্যিই ২৯৫ আসনে জিতে যায়, তাহলে তারাই সরকার গঠন করবে। কিন্তু ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ, ইন্ডিয়া জোটে বেশ কয়েকটি বড় বড় দলের নেতা রয়েছেন। তাঁরা কি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেবেন?
এই প্রশ্ন ইন্ডিয়া জোট গঠনের শুরু থেকেই ছিল। এ কারণে ইন্ডিয়া জোটকে শুরুর দিকে বেশ অসংগঠিতও দেখা যাচ্ছিল। তবে গত কয়েক মাসে এই জোটকে বেশ ঐক্যবদ্ধ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশের শক্তিশালী বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি যোগ দেওয়ায় ইন্ডিয়া জোট বেশ উজ্জীবিত হয়েছে।
এরই মধ্যে গত শনিবার বিকেলে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তাঁর পছন্দের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহুল গান্ধীর নাম ঘোষণা করেছেন। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি রাহুল গান্ধীকেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য নেতা মনে করি।’
খাড়গের এই বক্তব্যের পর ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য নেতার পক্ষ থেকে কোনো অসন্তোষ কিংবা প্রতিবাদ প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এ থেকে ধারণা করা যায়, ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহুলকে মেনে নিতে তাঁদের আপত্তি নেই।
ইন্ডিয়া জোটে সবচেয়ে বড় দল কংগ্রেস। তারাই সারা ভারতে সবচেয়ে বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। সেই হিসেবে, জয়ী হলে বেশির ভাগ আসন কংগ্রেসেরই পাওয়ার কথা। কংগ্রেসের দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্টেটসম্যান জানিয়েছে, কংগ্রেস এককভাবে ১৫০টির কাছাকাছি আসন পেতে পারে। আর জোটগতভাবে পেতে পারে ২৫০টির বেশি।
কংগ্রেস যদি সর্বাধিক আসনে জয় পায়, সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের পক্ষ থেকেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তা ছাড়া রাহুল গান্ধী আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত ও পরীক্ষিত একজন নেতা হয়ে উঠেছেন। তাঁর বয়স এখন ৫৪। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমেছে অনেক রাজনৈতিক রসদ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাহুল গান্ধী আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ক হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে বিগত ১০ বছরের মোদি শাসনামল তাঁকে বুদ্ধি, কৌশল ও অভিজ্ঞতায় একজন পোড়খাওয়া নেতায় পরিণত করেছে। তাঁর জনপ্রিয়তাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
গত বছর লাইফস্টাইল কনটেন্ট প্ল্যাটফর্ম কার্লি টেলসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাহুল জানিয়েছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে প্রথম তিনিটি কাজ করতে চান। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘প্রথমেই শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চাই। ছোট ছোট ব্যবসায়ী, যাঁরা অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের সাহায্য করতে চাই, যাতে তাঁরা স্বাবলম্বী হয়ে অন্যদের সাহায্যে আসতে পারেন। ছোট ব্যবসায়ীরা বড় হচ্ছেন, এটাই এখন ভারতের বিকাশে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এটা না হওয়ার জন্যই আমরা এই প্রবল বেকার সমস্যায় মরছি। অল্প মানুষের কাছে বেশি সম্পদ জড়ো হওয়াটা সমস্যার সমাধান করবে না। এটা দ্বিতীয় কাজ। আর তৃতীয় কাজ হলো কৃষক, শ্রমিক, বেকারদের রক্ষা। তাঁদের পাশে দাঁড়াব। তাঁদের বোঝাব, আপনাদের পাশে সরকার আছে। রাষ্ট্রের কাজ এটাই। দুর্বলকে রক্ষা করা।’
এমন একজন নেতা, যিনি ক্রমশ পোড় খেতে খেতে পরিপক্ক হয়ে উঠেছেন, অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন, দূরদর্শী হয়ে উঠেছেন, বুদ্ধিকে শানিত করেছেন, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।