স্টাফ রিপোর্টার
দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, সরকারের দুর্নীতি ও ভারতের সঙ্গে দেশের ‘স্বার্থবিরোধী’ সাম্প্রতিক চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের প্রতিবাদে ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি দেবে বিএনপি। শিগগির এসব বিষয়ে গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে দলটির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এসব বিষয়ে আলোচনার পর কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চু৵য়াল সভায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ ১০ জন সদস্য অংশ নেন।
স্থায়ী কমিটির সভার পর আজ মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এবং মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ও নজিরবিহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া সভায় সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। স্থায়ী কমিটির নেতারা মনে করেন, সরকার সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে ভারতের ওপর প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত নানা আঙ্গিকে আন্দোলন-কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বিএনপির নেতারা বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক পুলিশপ্রধানের পর আরও কিছু পুলিশ ও সরকারি পদস্থ কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে। এগুলোকে বর্তমান সরকারের সময়ে সংঘটিত দুর্নীতির ছিটেফোঁটা। প্রকৃত দুর্নীতির চিত্র আরও ভয়াবহ।
সভায় দুর্নীতির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিসহ দেশি–বিদেশি ব্যাংকগুলো থেকে ঢালাওভাবে ঋণ নিয়ে দেশকে ঋণের ফাঁদে ফেলার বিষয়ে আলোচনা হয়। এসব বিষয়ে তথ্য-উপাত্তনির্ভর প্রচারপত্র তৈরি করে তা সারা দেশে বিতরণ এবং বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি নেওয়া হবে।
এ ছাড়া সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ১০টি সমঝোতা স্মারকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়। দলটি ইতিমধ্যে এই সমঝোতা স্মারকের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছে। কানেকটিভিটির নামে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশে রেল যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যে ‘করিডর’ দেওয়া হয়েছে, তাতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করে বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও সরকারের দুর্নীতি এবং ভারতের সঙ্গে দেশের ‘স্বার্থবিরোধী’ সমঝোতা-চুক্তি; এ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে কর্মসূচি দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে বিএনপি। সব অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচি শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শিগগির কর্মসূচি নিয়ে আসছি। এ মুহূর্তে মানুষ কোন কোন বিষয়ে ক্ষুব্ধ, বিরক্ত; কোন জিনিসটি জনগণের মধ্যে এখন বেশি কাজ করছে, কোথায় কোথায় মানুষ ভুগছে—সেগুলোই আমরা চলমান আন্দোলনে কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করব।’