গণমাধ্যম নিউজ
বাংলাদেশের রাজনীতি চাটুকারদের রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। বাংলাদেশে আর এই রাজনীতি চলবে না উল্লেখ করে চাটুকারদের বাদ দিতে রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থা তুলে ধরে ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘আমরা কোনো রাজনীতিবিদ তৈরি করিনি। এমন চাটুকার তৈরি করেছি, মানুষ মরে যাওয়ার পরও বলছে, সব ঠিক আছে।’ আজ রোববার দুপুরে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাখাওয়াত হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এ রকম চাটুকারদের দল দিয়ে রাজনীতি করা যায় না। যেসব রাজনৈতিক দল আছে, এমনকি যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা আছেন, তাঁদের রাজনীতি চলবে। তাঁদের রাজনীতি বন্ধ করা যাবে না, বন্ধ হয়ও না। কিন্তু আপনারা অনুধাবন করেন, চাটুকার বাদ দেন।’
চাটুকারেরা এখন কোথায়, সেই প্রশ্ন রেখে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কত বড় চাটুকার চিন্তা করেন, একজন নেতাকে ফুল দিতে দিতে একদম কবর দিয়ে দিচ্ছে। নেতাও খুব আনন্দ পান। আর মিডিয়া না থাকলে উনি (নেতা) কথা বলেন না। মিডিয়া সামনে গেলে চাটুকারেরা আধা ঘণ্টা কথা বলেন। এখন কোথায় গেছেন তাঁরা? কেউ পালিয়েছেন, কেউ আত্মগোপন করেছেন। কারণ, আপনারা (নেতা) জনগণের বিপক্ষে ছিলেন, আপনারা (নেতারা) চাটুকারিতা করেছেন। আপনারা (নেতারা) সঠিক পরামর্শ দেননি। আপনারা হালুয়া–রুটি খেয়েছেন।’
একটা রাষ্ট্র এভাবে চলতে পারে না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা রাষ্ট্রের পলিটিকস (রাজনীতি) এভাবে হয় না। একজনের ইচ্ছেমতো রাষ্ট্র চালানো যায় না। সেটা যা–ই হোক, যার অবদানই থাক। মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল ঠিকই। কিন্তু হাজার হাজার লোক যুদ্ধ করে, ত্রিশ লাখ লোক জীবন দিয়ে রাষ্ট্র স্বাধীন করেছে। এই রাষ্ট্র কারও পারসোনাল প্রপার্টি (ব্যক্তিগত সম্পত্তি) না। আমি খুব পরিষ্কার ভাষায় বলছি, কারও পারসোনাল প্রপার্টি না। কারও ফ্যামিলির প্রপার্টি (পরিবারের সম্পত্তি) না।’
ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয়েছিল উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পলিটিকস (রাজনীতি) এত নষ্ট করা হয়েছে, আর কেউ এখানে ঢুকতে পারে না। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা হয়েছে। হাজার হাজার লোক মারা যাওয়ার পরও ক্ষমতায় থাকতে চায়। এটা দুঃখজনক, খুবই দুঃখজনক।’ তিনি বলেন, ‘যা হয়েছে, ইতিহাসকে ফেরত আনতে পারব না। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ অনেক পুরোনো পার্টি, সেখানে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তারা এ শিক্ষাটা গ্রহণ করবে। আমি চেষ্টা করব, যাতে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট যাতে থাকে। সে অনুযায়ী দল চালাতে পারলে চালাবেন, নয়তো বন্ধ করে দেবেন।
পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র দেওয়া হয়েছে। পুলিশের হাতে ৭ পয়েন্ট ৬২ (রাইফেল) দেখে আশ্চর্য হয়েছি। এটা বোধ হয় ১৫-২০ বছর আগে দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে এই মারণাস্ত্র দেওয়া ঠিক হয়নি। এটা এই জন্যই (লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার) দেওয়া হয়েছে।
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর হুকুমদাতাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এখন আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কারা পুলিশকে এভাবে ব্যবহার করেছে, তাদের উদ্দেশ্যটা কী? যেটা হয়েছে, আন্তর্জাতিক তদন্ত হবে, দেশি তদন্ত হবে। হুকুমদাতাদের বেশি ধরা হবে। খুঁজে বের করা হবে কার ভূমিকা কী ছিল।’দেশের গণমাধ্যমও চাটুকারিতা করেছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আপনারা (গণমাধ্যম) সত্যি ঘটনা তুলে ধরেন, আপনারা (গণমাধ্যম) সত্যি ঘটনা তুলে ধরেননি। সত্যি ঘটনা তুলে ধরলে, পুলিশের এই অবস্থা হতো না।’
গণমাধ্যম সত্য কথা না বললে দেশ ডুবে যায় উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘একটা দেশ ডোবে কখন, যখন গণমাধ্যম সত্যি কথা বলে না, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে। তথ্যমন্ত্রী (শেখ হাসিনা সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত) লেখাপড়া জানা লোক, উনি বললেন, যা করেছে দুষ্কৃতকারীরা করেছেন। ছাত্রদের আপনি দুষ্কৃতকারী বানিয়েছেন। এসবের বিচার হওয়া উচিত।’