স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর সড়কে ব্যাটারিচালতি রিকশা, ভ্যানসহ এ ধরনের যানবাহন বন্ধের প্রতিবাদে আগামী ২৭ মে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে ‘রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ভ্যান ও ইজি বাইক সংগ্রাম পরিষদ’।
সরকার ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন।
সোমবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে লিপন বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ঢাকা সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ ও সড়ক মন্ত্রণালয়– আপনারা যে তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। এই তুঘলকি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
“সরকারকে আমরা বলতে চাই, এ মাসের মধ্যেই আপনাদেরকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। প্রত্যাহারের জন্য আমরা এক ঘণ্টার নোটিস দিতে চাই না, এই মাস সময় নেন। আমাদের এই আন্দোলন চলবে। আগামী ২৭ মে ঢাকার শ্রমিকদের সাথে সারাদেশে ৬৪ জেলায় আন্দোলন তথা সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।”
ঢাকার রাস্তার অলি-গলিতে ব্যাটারিচালিত বাহনের চালক, মালিক ও যাত্রীদের নিয়ে সংগ্রাম কমিটি গঠন করে এলাকাভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন সংগ্রাম পরিষদের এই নেতা।
সমাবেশের পর পরিষদের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন, যা পল্টনের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
বিদ্যুৎচালিত তিন চাকার যানগুলো অটো, ইজিবাইকসহ নানা নামে পরিচিত। ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত কোনো রিকশা চলাচল করতে পারবে না বলে ঘোষণা আসে গত বুধবার।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, “ব্যাটারিচালিত কোনো গাড়ি যেন ঢাকা সিটিতে না চলে। আমরা ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করেছি। শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, চলতে যেন না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
দুর্ঘটনার জন্য সড়কে মোটরবাইক এবং ইজিবাইকের চলাচলকে দায়ী করেন তিনি। বিআরটিএ ভবনে মন্ত্রীর সঙ্গে ওই সভায় ঢাকার দুই মেয়রও শহরের মধ্যে এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে তাদের সম্মতি জানিয়েছিলেন।
এরপর দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান এবং এ ধরনের তিন চাকার যান চলাচল বন্ধে বিজ্ঞপ্তি দেয় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে বিআরটিএ।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দুদিন ধরে ঢাকার মিরপুর, রামপুরা, বাড্ডাসহ আরও কয়েক জায়গায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন ব্যাটারিচালিক রিকাশচালক এবং এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা। রোববার বিক্ষুব্ধরা মিরপুরে কয়েটি বাসে হামলাও চালায়।
প্রেস ক্লাবের সামনের সমাবেশ থেকে লিপন সরকারের উদ্দেশে বলেন, “আমরা যে সময় দিয়েছি, এর মধ্যে যদি সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে আমরা পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেব। লাখ লাখ কর্মহীন ও বেকার চালকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে সমাবেশে উপস্থিতদের মতামত জানতে চাইলে সবাই হাত তুলে সমর্থন জানান।
সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, “গতকাল কালশীতে ট্রাফিক বক্সে যে আগুন দেওয়া হয়েছে, এই আগুন কোনো সমাধান নয়, এটা কোনো সঠিক কাজ নয়। আপনারা রাস্তায় মিছিল করেন শান্তিপূর্ণভাবে। আমি বলব অপকর্মের সাথে আপনারা লিপ্ত হবেন না।
“আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে, গণতান্ত্রিতভাবে রাজপথে আপনাদের লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন।”
মিরপুর, লালবাগ, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রিকশা আটক, ব্যাটারি খুলে নেওয়া, ডাম্পিং, চালক ও মালিকদের হয়রানিসহ মিরপুরে পুলিশ হামলার ঘটনার নিন্দা জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
সমাবেশে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারি চালিত যানবাহনের শ্রমিকরা সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ‘এই সিদ্ধান্ত মানি না, মানব না’, ‘দালালদের কালো হাত ভেঙে দাও’, অটো রিকশা চলবে, চলবে চলবে’– ইত্যাদি স্লোগান দেন।
থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান নীতিমালা চূড়ান্ত ও কার্য্কর করে ইজিবাইক রিকশাসহ ব্যাটারি চালিত যানবাহনের দ্রুত নিবন্ধন, লাইসেন্স ও রুট পারমিট প্রদানসহ সংগ্রাম পরিষদের ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন আহ্বায়ক।
ঢাকা মহাগরের সহসভাপতি জালাল আহমেদের সভাপতিত্বে ও অর্থ সম্পাদক রোখশানা আফরোজা আশার সঞ্চালনায় সমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা জুলফিকার আলী, আবু নাঈম খান বিপ্লব, দাউদ আলী মামুনসহ নেতারা বক্তব্য দেন।