1. [email protected] : Parves Sharif : Parves Sharif
  2. [email protected] : skriaz30 :
আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা । অহিংসা ও মানবতার জয় হোক - গণমাধ্যম
January 10, 2025, 8:39 pm
সর্বশেষ
শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারে অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা নারায়ণগঞ্জে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস উদ্বোধন করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বন্দরে গরু চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি, এক খামারীর চার গরু চুরি চীনে গোপনে ড্রোন প্রকল্প চালু করেছে রাশিয়া তরুণরা ‘রিসেট বাটন’ চেপেছে, সব পুরনো শেষ: নিউ ইয়র্কে ড.ইউনূস দূর্গাপূজায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ-প্রশাসন ও সেনাবাহিনী তৎপর: ডিসি নারায়ণগঞ্জে দুই শিশু এক নারী সহ নিহত ৫৬জনের তালিকা গোগনগর গাউসিয়া কমিটির উদ্যোগে জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উদযাপন দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ ও বিভিন্ন মাজারে হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই : সারজিস

আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা । অহিংসা ও মানবতার জয় হোক

Reporter Name
  • Update Time : Wednesday, May 22, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার
আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। ২৫৬৮ বুদ্ধাব্দের শুরু। এই দিনে মহামানব গৌতম বুদ্ধের জন্ম লুম্বিনি উদ্যানে খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে। দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর তপস্যার পর তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে গয়ার বোধিধ্রুম মূলে। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধর্ম প্রচারের পর তিনি ৮০ বছর বয়সে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে। বুদ্ধজীবনের এই তিনটি প্রধান ঘটনা মানববিশ্বের ইতিহাসে ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’ নামে অভিহিত। জাতিসংঘ এ দিবসটিকে ‘ভেসাক ডে’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বৌদ্ধরা দিনটিকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং নানা আয়োজন ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করছি। আজ এই শুভ দিনে আমি বাংলাদেশের জনসাধারণসহ বিশ্বের মানবগোষ্ঠীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আজকের সমাজ ও বিশ্বে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেই ব্যথিত হই, কষ্ট পাই। মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করেছে। আজ সর্বত্র সংঘাত, হিংসা, প্রতিহিংসা, দ্বেষ ও জিঘাংসা। এগুলো মানবিক আচরণ হতে পারে না। কোনো ধর্মই এগুলো শেখায়নি। এসব আচরণ মানুষের চিত্তকে কলুষিত করে এবং দেহ ও মনকে করে পীড়িত। সুতরাং দেহে যেমন সুষম আহারের প্রয়োজন হয়, তেমনি চিত্তেরও। চিত্তের সুষম আহার হলো সৎচিন্তা এবং নির্লোভ, নির্মোহ ও অহিংস অবস্থায় চিত্তকে নিরাপদে রাখা। আমরা এও জানি, দেহ বা শরীরকে ধৌত করা যায়, কাপড়-চোপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও করা যায়, কিন্তু চিত্তকে ধৌত করা যায় না, পরিষ্কারও করা যায় না। বৌদ্ধমতে একমাত্র শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞাগুণ দিয়েই চিত্তকে ধৌত করতে হয়।
বুদ্ধ বলেছেন, ব্যক্তি সর্বদা তার চিন্তা, চেতনা ও মননে এবং সৎচিন্তা ও কুশল ভাবনা দিয়ে চিত্তকে সজীব রাখতে পারে। তাহলেই চিত্ত সুস্থ, সবল ও নিরাপদ থাকে। বৌদ্ধমতে নিজের চিত্তকে নিজকেই শাসন করতে হয়। ব্যক্তি তার নিজের চিত্তকে শাসন করতে না পারলে পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নেই যে তার চিত্তকে শাসন করবে। এজন্য বৌদ্ধধর্মে আত্মসংযম, আত্মদমন ও আত্মশাসনের কথা বলা হয়েছে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে। আত্মদমন বা আত্মশাসনই সর্বশ্রেষ্ঠ শাসন এবং আত্মসংযম বা আত্মজয়ই বড় বিজয়। তাই ধর্মপদে বলা হয়েছে, ‘যিনি হাজার হাজার সৈন্যকে যুদ্ধশিবিরে পরাজিত করেন তিনি বিজয়ী নন; যিনি আত্মজয়ী (যিনি নিজের ইন্দ্রিয় ও রিপুকে জয় করতে পেরেছেন) তিনিই প্রকৃত বিজয়ী।’ বর্তমান বিশ্বে মানবতার জন্য বুদ্ধের এ উক্তিটি অসাধারণ। বুদ্ধ এও বলেছেন, জয় শত্রুতার সৃষ্টি করে। পরাজিত ব্যক্তি দুঃখে অবস্থান করেন। যিনি জয়-পরাজয়ের ঊর্র্ধ্বে তিনিই সুখানুভব করেন।
বৌদ্ধধর্মে শান্তির জন্য কোনো প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ নেই। নেই কোনো অস্ত্র ও বোমার আতঙ্ক। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও আগ্রাসন নেই বললেও চলে। পুঁজিবাদ ও ধনবাদের কথা তো আসতেই পারে না। মহামানব বুদ্ধ তো সেই সমাজ ও জনগোষ্ঠীর কথাই বলেছিলেন, যেখানে থাকবে অনন্ত প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-মমতা আর ভালোবাসা। থাকবে না কোনো হিংসা-প্রতিহিংসা; থাকবে না অপরের অকল্যাণ ও দুঃখ কামনা। এটাই তো সত্যিকারের মানবপ্রেম; বিশ্বশান্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করার প্রধান উপাদান। সুতরাং বুদ্ধনীতি শুধু শান্তি আনয়ন করে না, দেশ, সমাজ ও বিশ্বে সুশাসনও প্রতিষ্ঠা করে।
বুদ্ধ আরও বলেছেন, ‘শান্তি-সুখ বাইরে খুঁজে লাভ নেই; খুঁজতে হবে নিজের মধ্যেই, অনুসন্ধান করতে হবে নিজের ভেতরেই।’ বুদ্ধ বোধিসত্ত্ব অবস্থায় এই পথ অনুসরণ করে গৃহকারকের সন্ধান পেয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেছিলেন, ‘এবার আমি তোমার সন্ধান পেয়েছি, তুমি আর গৃহ নির্মাণ করতে পারবে না।’ তিনি বলেছেন, ‘বুদ্ধকে পূজা করে লাভ নেই, নিজের আত্মশুদ্ধিতেই নিজকে পূজা করো। যদি নিজকে কেউ পরিশুদ্ধ করতে না পারে, তাহলে জীবন বৃথা, জীবনের সব সাধনাই বৃথা। বুদ্ধ এও বলেছেন, অপরের দোষ-ত্রুটি দেখে কিংবা অনুসন্ধান করে লাভ নেই, নিজের দোষ-ত্রুটি দেখাই উত্তম।’ এজন্যই ধর্মপদে বুদ্ধ বলেছেন, ‘যিনি ন্যায়, ধর্ম ও সাম্যের সঙ্গে সবাইকে পরিচালিত করেন তিনিই ধর্মের অভিভাবক, তিনিই পণ্ডিত এবং তিনিই সুবিচারক।’
এ জন্যই বৌদ্ধধর্মে মানবিক মূল্যবোধ, নীতি-আদর্শ এবং মানুষের চরিত্র কিংবা মানুষের আচরিত ধর্মকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিচার করা হয়েছে। বৌদ্ধধর্ম বলে, আপনকর্মের মধ্যেই নিজের সুখ-দুঃখ নিহিত। নিজের কৃত পাপই নিজেকে কলুষিত করে কিংবা পরিশুদ্ধ করে। অর্থাৎ শুদ্ধি-অশুদ্ধি সব নিজের ব্যাপার।
মহাজাগতিক রহস্যে বুদ্ধের অভিনব আবিষ্কার আধুনিক বিজ্ঞান জগতে প্রতিমুহূর্তে প্রমাণিত হচ্ছে। যেমন-বৃক্ষের প্রাণ আছে একথা বুদ্ধ আড়াই হাজার বছরেরও বহু আগে ভিক্ষুসংঘকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন। এজন্য বিনয় পিটকের মহাবর্গে আছে, হে, ভিক্ষুগণ কোনো ধরনের গুল্ম-লতাপাতা-বৃক্ষ ছেদন করতে পারবে না। এতে ‘দুক্কট’ আপত্তি হবে। ঠিক একইভাবে মহাজাগতিক এ বিশ্বে নানা গ্রহ-উপগ্রহে যে প্রাণ বা প্রাণীর অস্তিত্ব আছে, তাও বুদ্ধ সর্বজ্ঞতা জ্ঞানলাভের পর ভিক্ষুসংঘ ও গৃহীদের উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন।

বিজ্ঞানীদের চোখে যেমন অণু-পরমাণু ধরা পড়ে এবং পরবর্তীকালে বিশ্লেষিত হয়, তেমনি গৌতম বুদ্ধও ছিলেন মহাবিশ্ব ও মহাজগতের এক ও অনন্য বিজ্ঞানী। তিনি দশ প্রকার পারমী, উপপারমী ও পরমার্থ পারমী সর্বমোট ত্রিশ প্রকার পারমী পূর্ণ করে সর্বজ্ঞতা জ্ঞানলাভ করেছিলেন। তাই তিনি বিশ্বে এক মহাবিজ্ঞানী ছিলেন, যিনি সৃষ্টি রহস্য থেকে আরম্ভ করে জীবন ও জগতের সব রহস্য ও কার্য-কারণ তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন এবং আকাশায়তন, বিজ্ঞানায়তন, আকিঞ্চনায়তন ও নৈবসংজ্ঞা-না সংজ্ঞায়তন-এ চার অরূপ ব্রহ্মের প্রজ্ঞা-স্তর অতিক্রম করে জন্ম-মৃত্যুর নিরোধ স্থান পরম অমৃতময় নির্বাণে লাভ করেছিলেন।
বলতে গেলে একদিন চন্দ্র ছিল রূপকথার গল্প বা সুতা কাটার এক বুড়ি। অথচ সেটিও জ্ঞানে-বিজ্ঞানে নবরূপে আবিষ্কৃত হয়েছে। বুদ্ধের দিব্যদৃষ্টি ছিল। তাই তিনি ওই দিব্য চক্ষু ও দিব্যদৃষ্টিতে এ মহাবিশ্ব ও সৌরমণ্ডলের সবকিছুকে অবলোকন করেছিলেন, পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। বুদ্ধের এসব আবিষ্কার বর্তমান বিশ্বের বিজ্ঞানীদের চোখেও ধরা পড়ছে প্রতিনিয়ত। অথচ গৌতম বুদ্ধ এসব আবিষ্কার করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দে। মহাবিশ্ব সম্পর্কে কী অভাবনীয় আবিষ্কার বুদ্ধের, ভাবলে আশ্চর্য হই।
বুদ্ধ এও বলেছেন, প্রার্থনায় কখনো মুক্তি আসে না, যদি সৎচিন্তা ও সৎকর্ম না করা হয়। প্রার্থনা ও কর্ম এক হলেই সাধনা সিদ্ধি হয়। এজন্যই বৌদ্ধধর্মে আটটি প্রার্থনার পথ ও কর্মের কথা বলা হয়েছে, যাকে বলা হয় আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা আটটি বিশুদ্ধ পথ। এগুলোর অনুশীলন ও চর্চায় জীবন সুন্দর, মাধুর্যময় ও পরিপূর্ণ হয়। যেমন সৎ বাক্য বলা, সৎ চিন্তা করা, সৎ কর্ম করা, সৎ জীবিকা নির্বাহ করা, সৎ প্রচেষ্টা, সৎ স্মৃতি ও সৎ সমাধি করা ইত্যাদি।
সামাজিক জীবনে মানুষের অনেক ধরনের চাহিদা থাকতে পারে। যেমন-ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং নানা ধরনের অতৃপ্ত বাসনা। তাই বলে যে আমি মিথ্যা বা অসৎ পথ অবলম্বন করে সেটা অর্জন করব, তা হতে পারে না। বিত্ত-বৈভব ও সম্পদ অর্জনের চাহিদা আমাদের চিত্তকে প্রতিমুহূর্তে ব্যাকুল করে তুলছে। আমাদের নিয়ে যাচ্ছে মিথ্যা ও বিপথগামিতার দিকে। এজন্যই সমাজ ও রাষ্ট্রের আজ এ দুর্দশা। দেশ ও বিশ্বে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, নৈরাজ্য ও অরাজকতা ছেয়ে গেছে। তাই সমাজ, দেশ ও বিশ্ব হয়ে যাচ্ছে অশান্ত ও অস্থিতিশীল। সুতরাং আমাদের এ নীতিবোধে বিশ্বাসী হয়ে সৎচিন্তা করতে হবে এবং সব সময় সৎকর্ম সম্পাদন করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে ধর্মের গৌরব ও মর্যাদা সেখানেই। আমরা বিবেকবোধসম্পন্ন মানুষ। আমরা যদি নীতিকে অনুসরণ না করি, তাহলে এ নীতিগুলো অনুসরণ করবে কে বা কারা?
মুক্তিকামী মানুষকে সব ধরনের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস তথা মিথ্যাদৃষ্টি থেকে মুক্ত থাকতে হবে। যাগ-যজ্ঞ, বলি-হোম ইত্যাদি কর্ম থেকেও বিরত থাকতে হবে। মানুষে-মানুষে, জাতিতে-জাতিতে ভেদাভেদ ও অসমতা সৃষ্টি না করে মানবতার কাজ করতে হবে। এমনকি নিজের বুদ্ধি, যুক্তি ও শক্তির ওপর নির্ভর করে দুঃখ মুক্তি তথা নির্বাণ সাধনাও করতে হবে।
চলুন আমরা আজ মহান বুদ্ধপূর্ণিমার এই শুভ দিনে প্রার্থনা করি-সব ধরনের যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ হোক, হিংসা-প্রতিহিংসার অবসান ঘটুক। মানবতার জয় হোক। সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু-জগতের সব জীব সুখী হোক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২8 সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
Theme Customized BY Sk Mizan