স্টাফ রিপোর্টার
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় নতুন করে ৬ থেকে ৭ লাখ নাগরিককে যুক্ত করার ‘সুখবর’ আসছে নতুন বাজেটে।
ফলে আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণও বাড়তে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
তবে জনপ্রতি ভাতার পরিমাণ বাড়ছে কিনা, মোট কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা এই মুহূর্তে প্রকাশ করতে চাননি তিনি।কর্মকর্তারা বলছেন, আসছে বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হতে পারে।
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ৪৭টি কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং জিডিপির (৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আসছে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি বরাদ্দ রাখা হতে পারে, যা হবে মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা।”
আসছে ৬ জুন জাতীয় সংসদে প্রায় ৭ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব রেখে বাজেট উপস্থাপন করতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার।
এ হিসাবে আসন্ন বাজেটের আকার ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়তে পারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসন্ন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। এবার বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২ লাখের মত বাড়তে যাচ্ছে। দুস্থ ও বিধবা ভাতার আওতায় আরও ২ লাখ এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচিতেও আরও দেড় লাখ নাগরিককে যুক্ত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী সহায়তা কর্মসূচিতে আরও কিছু ব্যক্তিকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সব মিলিয়ে নতুন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে একটি ভালো ঘোষণা থাকবে বলে আশা করছি।”
২০২৩ সালের বাংলাদেশ জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী প্রায় ৪৬ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর ২ দশমিক ৮ শতাংশ।
চলতি বাজেটে ৫৮ লাখ নাগরিককে বয়স্ক ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, নতুন বাজেটে সে সংখ্যা ৬০ লাখে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।
দুস্থ ও বিধবা ভাতার জন্য বাছাই করা হয়েছিল ২৫ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ, যা আগামী বাজেটে বেড়ে প্রায় ২৮ লাখ হাতে পারে। বর্তমানে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন ১৩ লাখ ৪ হাজার মানুষ, যা আগামী বাজেটে হতে পারে সাড়ে ১৪ লাখ থেকে ১৫ লাখ।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে চলতি বাজেটে ২৯ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় রাখা হয়েছে। আগামী বাজেটে এ সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতের একটি কর্মসূচি বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা সহায়তা ভাতা। এ কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জনের জন্য জনপ্রতি মাসিক ৫৫০ টাকা হারে মোট ১ হাজার ৭১১ দশমিক ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
মূল্যস্ফীতির বাজারে মাসে ৫৫০ টাকা ভাতা আসলেই কী কাজে আসে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের রয়েছে ভিন্নমত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বাস্তবতার তুলনায় এ পরিমাণ ভাতাকে ‘অপ্রতুল’ বলছেন।
এ খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা দরকার বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “উপকারভোগীর পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি মাথাপিছু বরাদ্দ অবশ্যই বাড়াতে হবে।
“আগের বাজেটে এ খাতে আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখেছি। অবশ্য পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। ওএমএসের পরিধি ও ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রয়োজনে আরও সুলভে পণ্য দেওয়া, রেশনের ব্যবস্থা করা, ন্যায্যমূল্যের দোকানের ব্যবস্থা করা যায় কিনা- তা দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় একটি কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে।”
দেশের ৬৫ বছরে বেশি বয়সি পুরুষ ও ৬২ বছরের ঊর্ধ্বের নারী, যার অসচ্ছল- অসহায় এবং যাদের বার্ষিক আয় ১০ হাজার টাকার নিচে তারা বয়স্ক পাওয়ার আবেদন করতে পারেন।সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৮ লাখ ১ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৬০০ টাকা হারে মোট ৪ হাজার ২০৫ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রান্তি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন বয়স্ক বা প্রবীণ নাগরিকরা। জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জনগণের ৬ দশমিক ১৪ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। অর্থাৎ বয়স্ক জনগোষ্ঠী ১ কোটি ১০ লাখ ৪১ হাজার ৪৯৫ জন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় এসেছেন।
এখানেও উপকারভোগীর সংখ্যা গুরুত্ব পেয়েছে, জনপ্রতি ভাতার পরিমাণ বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সামান্য, যা মাসে মাত্র ৬০০ টাকা।
অধ্যাপক বিদিশা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামজিক নিরাপত্তাকে সুনির্দিষ্টভাবে গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করছেন। তবে তিনি শহরের বস্তিতে থাকা প্রান্তিক নাগরিকদের ব্যাপারটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। শহরাঞ্চলে বরাদ্দ অনেক কম। কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে কেবল। এ জায়গায় বড় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
আরেক অংশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য এবং শ্রমবাজারে অভিগম্যতা ও তাদের প্রতি সহিংসতা কমাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।