স্টাফ রিপোর্টার
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার গড়া দল বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধি প্রাঙ্গণে আসেন। পুষ্পমাল্য অর্পণের পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন তারা।
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি দুবৃর্ত্তদের কবলে, বাংলাদেশ এখন লুটেরা মাফিয়াদের কবলে। একদিকে তারা (সরকার) রাজনৈতিক অধিকার হরণ করছে, অন্যদিকে তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে।
“তাদের মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে এটাকে পরনির্ভরশীল একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করছি। ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হব।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে নির্বাসিত। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যে শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কলাকৌশল করে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে নিয়ে তারা আজকে ক্ষমতাকে দখল করে আছে এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চাচ্ছে ভিন্ন পদ্ধতিতে।
“আমরা শপথ নিয়েছি যে, আমরা যুবক-তরুণ-অবাল বৃদ্ধ-বনিতা আজকে আমাদের অধিকার রক্ষার জন্যে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলনকে আরও বেগবান করব এবং এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ যে দানবীয় সরকার তাদেরকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।”১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। এরপর সেনাপ্রধান হন জিয়াউর রহমান।
ওই বছরের ৭ নভেম্বর ‘সিপাহি-জনতার বিপ্লবের’ পর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এএসএম সায়েমের নেতৃত্বে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ১৯৭৮ সালের ২১ এপ্রিল।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে এক দল সৈন্যের গুলিতে নিহত হন জিয়া। বিএনপি দিনটি তার ‘শাহাদত দিবস’ হিসেবে পালন করে।
প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে এ বছর ১৫ দিনের কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
আগে এই দিনে জিয়ার স্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শেরেবাংলা নগরে গিয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি মামলায় সাজায় কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে দলের মহাসচিব স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করছেন।
জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম, রফিক শিকদার, আমিরুজ্জামান শিমুল,আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগরের রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুব দলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না উপস্থিত ছিলেন।পরে কবর প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিলেও তারা অংশ নেন।
বিএনপি ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতীদল, মৎস্যজীবী দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদাভাবে জিয়ার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
১৫ দিনের কর্মসূটির অংশ হিসেবে সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প খোলা হয়েছে। দিনব্যাপী এই ক্যাম্পে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দুঃস্থ রোগীদের দেখে বিনামূল্যে ওষুধ দিচ্ছেন।
কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো পোস্টার প্রকাশ করেছে। পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়েছেন।
জিয়ার কবরের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরে আগারগাঁও লায়ন চুক্ষ হাসপাতাল, হাই কোর্ট মাজার প্রাঙ্গণে, সেগুন বাগিচা, শাহজাহানপুর, নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ একাধিক স্পটে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। এই সময়ে বিএনপি মহাসচিবের সাথে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগরের দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ছিলেন।
মিরপুরের পল্লবী শপিং সেন্টারসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি মহানগর উত্তর-দক্ষিনের উদ্যোগে দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।