স্টাফ রিপোর্টার
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ আখতারুজ্জামান শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত ফিরিয়ে আনবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেছেন, “হত্যাকাণ্ডের মামলা ভারতে হয়েছে। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। কাজেই ভারত সরকারই এটা দেখবে, যেহেতু ঘটনাটা ঘটেছে তাদের দেশে।
“যেখানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, মূল মামলার তদন্ত তারাই করবেন। সেখানে যদি আমাদের সম্পৃক্ত করে আমরা সহযোগিতা করব।”শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি একথা বলেন।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এর পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার করা হয় আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমানকে।
প্রথম দফা রিমান্ড শেষে তাদেরকে ফের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহীন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য আখতারুজ্জামানের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।আখতারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসামি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই, কিন্তু ভারতের আছে। শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে পশ্চিমবঙ্গ ক্রাইম ইনভেস্টিগেটিভ ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।
এদিকে আনার হত্যার তন্তে শনিবার সকালে নেপালে গেলে ডিবির একটি দল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “নেপালে একজন পালিয়ে গেছে। যে যেখানে আছে, তাদের ধরার চেষ্টা চলছে। একজন সংসদ সদস্যকে এরকম নৃশংসভাবে হত্যা করবে, আর আমরা বসে থাকব এটা তো হতে পারে না।
“আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, যারা এই খুন করেছে বা খুনে সহযোগিতা করেছে, তদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। নেপালে যে আছে, তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা সেটা আমরা করছি।”
বেনজীরের দায় নেবে না পুলিশ
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ব্যক্তিগত অপরাধ করে থাকলে তার দায় পুলিশ নেবে না বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধানের মুখে থাকা বেনজীরের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ব্যক্তি কোনো কিছু করে থাকলে তার দায় প্রতিষ্ঠান নেয় না। যদি কেউ অন্যায় করে থাকে, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী বিচার হবে। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে জানা যাবে, সে কি দোষী, না নির্দোষ। অর্থ বানিয়েছেন, নাকি কর ফাঁকি দিয়েছেন, কিংবা সম্পদ বানিয়ে তথ্য দেননি, আমাদের একটা ডিপার্টমেন্ট অনুসন্ধান করছে।”
বেনজীরের দেশের বাইরে চলে যাওয়ার খবর প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “তাকে তো আমরা এখনও নিষেধাজ্ঞা দেইনি। আামি কিন্তু সঠিক জানিনা সে আছে কিনা চলে গেছে। আমাকে জেনে কথা বলতে হবে। দেশে আছে কি নাই, সেটা আমি নিশ্চিত নই।”