গণমাধ্যম নিউজ
রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “তাহলে এটা রাষ্ট্র আছে এখন।”
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ কোথায় আছেন সে বিষয়ে তথ্য না থাকার কথা বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন বিএনপি নেতা।রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্মরণে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন ফখরুল।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই আলোচনায় এনপি নেতা বলেন, “কি ভয়াবহ চিন্তা করুন। পত্রিকা খুললে শুধু লুট আর লুট ছাড়া কিছুই পাবেন না। অদ্ভুত! কারা লুট করছে? যারা আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রের বড় দায়িত্বে তারা।
“আর্মির সাবেক প্রধান! ইমাজিন (কল্পনা করুন), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রধান আইজি, তাদেরটা বেরিয়ে আসছে।“সংসদ সদস্য চোরাচালানির সাথে জড়িত, টুকরা টুকরা হয়ে যায়। মাদক পাচারকারীও সংসদ সদস্য ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে, এই কোন সমাজ বলেন আপনারা।”
বেনজীর আহমেদকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “তার (বেনজীর) সম্পর্কে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান বলছেন, ‘আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানি না।’
“তাহলে রাষ্ট্র কিছুই জানে না। তাহলে এটা রাষ্ট্র আছে এখন?”বিভিন্ন পত্রিকায় বেনজীর ও তার পরিবারের বিপুল সম্পত্তি থাকার খবর আসার পর সেগুলো বৈধভাবে অর্জিত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। তাদের আবেদনে সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও ব্যাংক হিসাব স্থগিতের আদেশ এসেছে।
তবে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, আদালতের আদেশ আসার আগেই বেনজীর ব্যাংক থেকে তার বেশিরভাগ অর্থ তুলে নিয়েছেন। এরপর দেশ ছেড়ে যান।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আয়োজনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, “তাকে (বেনজীর) তো আমরা এখনও নিষেধাজ্ঞা দেইনি। আমি কিন্তু সঠিক জানি না সে আছে কি না চলে গেছে। আমাকে জেনে কথা বলতে হবে। দেশে আছে কি নাই, সেটা আমি নিশ্চিত নই।”
আইজিপি থাকার সময় অস্ত্র নিয়ে বেনজীরের একটি মন্তব্যও স্মরণ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, “তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ দেখেন, এরা যেন আমাদের প্রভু। ওই এক প্রভু আজকে কোথায় গেছে? এমনভাবে কথা বলত… পিস্তল দেখিয়ে বলত, ‘এটা তোমাকে এমনি দেওয়া হয় নাই, এটা ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হয়েছে।
“করেছেনও ব্যবহার, মানুষকে মেরেছে, গুম করে রেখে এখন আপনি (বেনজীর আহমেদ) কোথায়?”
জবাবদিহিতা নেই, কেবল লুটপাট
বিএনপি নেতা বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হয়ে যায়। সোনা হারিয়ে যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার নিয়ে চলে যাচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল হ্যাকিং হচ্ছে, কল্পনা করা যায়?
“শেয়ারবাজারে রথী মহারথীরা লুটপাট করে শেষ করে দিচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব (আবুল মাল মুহিত) বলেছিলেন, ‘আমার কিছু করার নাই, ওদের হাত অনেক লম্বা।’
“বাংলাদেশে এখন অনেক বড় বড় মানুষ, এত বড় বড় যে তাদের আশেপাশে যাওয়া যায় না। কেউ দরবেশ, কেউ সন্ন্যাসী, কেউ বিরাট ধর্মীয় আলেম।”
চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকের শাখা থেকে ১৪৯ ভরি সোনা লোপাট নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত খবর তুলে ধরে ফখরলে বলেন, ‘১৪৯ ভরি সোনা তো কিছুই না ভাই। ব্যাংক থেকে তো টনকে টন সোনা চলে যাচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
“কোনো দিকে কোনো চিন্তা নাই, জবাবদিহিতা নাই, কিচ্ছু নাই। একটাই চিন্তা ছিল, ‘আমাকে ক্ষমতায় বসিয়ে রাখতে হবে, কেউ নাড়াতে পারবে না।’ তার জন্য আমি আমার চতুর্দিকে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে রক্ষী তৈরি করেছি।”
দেশকে ঋণগ্রস্ত করে ফেলেছে
উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতিকে পুরোপুরি ঋণগ্রস্ত করে ফেলেছে। এমন অবস্থা হচ্ছে যে, ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
“এদের ‘যুক্তি’ হচ্ছে, ‘২০ বছর ধরে আমরা এটা করব, তারপরে আমরা নাই, যা হওয়ার তাই হবে।’ কত দায়িত্বহীনতা চিন্তা করেন! একটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঋণের ওপর দিয়ে রেখে যেতে চায়। এখনই ইতিমধ্যে সেই ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাথাপিছু এক লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা।”
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট নেওয়ার সমালোচনা করে বিএনপি নেতা বলেন, “এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে করতে আমরা শেষ হয়ে যাব।”
‘অস্তিত থাকবে না’
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো জরুরি বলেও মনে করেন ফখরুল। বলেন, “এরা সরকার নয়, এরা বর্গি, ডাকাত, লুটেরা। এদেরকে যদি আমরা প্রতিরোধ করতে না পারি, ঠেকাতে না পারি আমাদের দেশের অস্তিত্ব থাকবে না।”
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও মাহবুব আলমের সঞ্চালনায় আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, শামসুল আলম লিটন ও আবু নাছের বক্তব্য রাখেন।