সপ্তাহখানেক স্বস্তিতে কাটার পর ফিরে এসেছে ভ্যাপসা গরম। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) থেকে কমে যাবে বৃষ্টির প্রবণতা। তবে বৃষ্টি কমলেও এপ্রিলের মতো তীব্র বা অতিতীব্র তাপপ্রবাহের আপাতত কোনো শঙ্কা নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২০ মে’র পর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। মে মাসের তাপপ্রবাহে রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। ঢাকার তাপমাত্রা থাকবে ৩৬ থেকে ৩৮ সেলসিয়াসের মধ্যে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন দেশের ৪৪টি স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাত্র ৩টি স্টেশনে বৃষ্টি হয়েছে। পটুয়াখালীতে সর্বোচ্চ ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় ৫ ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় এক মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ৮টি স্টেশনে আজ থেকে শুরু হয়েছে মৃদু তাপপ্রবাহ। আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী ও টাঙ্গাইলে ৩৬ দশমিক ৫, যশোরে ৩৬ দশমিক ২, ফেনী ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, এপ্রিল মাসে দীর্ঘসময় তাপপ্রবাহ ছিল। এই সময়ে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছিল, যেটি গত ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপর সারা দেশে এক সপ্তাহের মতো বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এখন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অনেকটা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা একটু বেশি। তবে দক্ষিণাঞ্চলে কম।
তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত কমে আসা মানেই গরম বাড়বে। মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বিক্ষিপ্তভাবে এলেও দীর্ঘায়িত হবে না। আবার তীব্র বা অতি তীব্রও হবে না। এর ব্যাপ্তিও সারা দেশে বিস্তার লাভ করবে না। দেশের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে বিস্তার লাভ করতে পারে। এটা চার থেকে পাঁচ দিন থাকতে পারে। আগামী ২০ এপ্রিলের পর সাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। লঘুচাপ তৈরি হওয়ার পর বোঝা যাবে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, আমাদের গাণিতিক মডেলগুলো বলছে চলতি সপ্তাহে মৃদু তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। তবে সেটা কেবল দেশের পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় হতে পারে। আগামী সাত দিনে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহেরও কোনো শঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তবে মে মাসে যেহেতু তাপমাত্রা বেশি থাকার ইতিহাস অতীতে রয়েছে, সেহেতু তাপমাত্রা কোথাও কোথাও বাড়তেও পারে।
সারা দেশে আগামী ১৯ কিংবা ২০ মে থেকে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৭ দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে ৫ মে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১২৪ মিলিমিটার, ৬ মে ফেনীতে ১৩০, চট্টগ্রামে ১১৮, ৭ মে রাজশাহীতে ৫১ মিলিমিটার এবং সর্বশেষ ১১ মে ঢাকায় ৮৭ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজ সোমবার সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
এসময়ে টাঙ্গাইল, রাজশাহী, পাবনা, যশোর, নীলফামারী, রাঙ্গামাটি ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগসমূহের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং তা কিছু কিছু জায়গায় বিস্তার লাভ করতে পারে।
বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
চলতি গরমের মৌসুমে ৩১ মার্চ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ৬ মে পর্যন্ত রেকর্ড ৩৭ দিন ধরে ওই ধারা চলে। এরপর গত এক সপ্তাহ ধরে ঝড়বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ায় স্বস্তি ফেরে জনজীবনে। টানা দাবদাহের মধ্যে ৩০ এপ্রিল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। চুয়াডাঙ্গায় সেদিন থার্মোমিটারের পারদ ওঠে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে। আর ঢাকায় তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে।